Breaking News

এবার তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে বিপাকে আছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। এরই মধ্যে টিউলিপের চাচা তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রায় ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে দুইবার ইউরোপের দেশ মাল্টাতে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী ও কন্যা। তবে অর্থপাচার, দুর্নীতি ও ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মাল্টা।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ফাঁস হওয়া নথির বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বৃটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন বৃটেনের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক ২০১৩ ও ২০১৫ সালে মোট দুইবার হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের কাছে মাল্টার নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করেন। তবে দুর্নীতি ও ঢাকায় জমি আত্মসাতের দায়ে অভিযোগ থাকায় দুইবারই তার আবেদন নাকচ করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, শাহীনের বিরুদ্ধে হাসিনার আমলে ঢাকার জমি আত্মসাতের অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় মাল্টার ইমিগ্রেশন কন্সালটেন্সি তাদের নাগরিকত্বের আবেদন নাকচ করে দেয়। শাহীন সিদ্দিক টিউলিপের আপন চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। তারিক ছিলেন শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। টানা ১৬ বছর স্বৈরশাসন চালানোর পর গত আগস্টে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার গোটা শাসনামলেই ব্যক্তিগত সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তারিক। হাসিনার পতনের পর অক্টোবরে তারিক সিদ্দিকের পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

হেনলির প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাল্টাতে পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তারিকের পরিবার কীভাবে সেখানে নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তার বিশদ বিবরণ পাওয়া গেছে। ঢাকায় প্রচ্ছায়া নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে জমি আত্মসাৎ করেন শাহীন সিদ্দিক। ২০১৩ সালে নাগরিকত্ব আবেদনের নথিতে প্রচ্ছায়া নামের সংগঠনটির কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সমালোচকদের দাবি ২০০৯ সালের পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তারিক। তিনি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রচ্ছায়ার মাধ্যমে ঢাকার জমি দখল করেছিলেন। ২০১৬ সালে আত্মসাৎকৃত ওই জমিগুলো বিক্রি করে দেন তিনি।

ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে দুইবার মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন শাহীন। দ্বিতীয়বার লন্ডনে থাকা মেয়ে বুশরার সঙ্গে যৌথভাবে আবেদন করেছিলেন তিনি। বুশরা টিউলিপের চাচাতো বোন। ২০১১ সালে প্রচ্ছায়ার পরিচালক হিসেবে ছিলেন বুশরা। ২০১৫ সালের মার্চে মাল্টাতে নাগরিকত্বের জন্য যৌথ আবেদন করেন তারা। যেটি পেতে তাদের যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড লাগতো। এর সঙ্গে ফি হিসেবে আরও ৭০ হাজার পাউন্ড নিতো হেনলি। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকার সমান। আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন। ১১ বারে এই অর্থ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস কী ছিল সেটি স্পষ্ট নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন আছে সে অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারবেন না। লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় থাকতেন বুশরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনপত্রে লন্ডনের গথিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়েছিলেন তিনি। তার এই ফ্ল্যাটটি টিউলিপের কিংস ক্রসের ফ্ল্যাট থেকে মাত্র দুই মিনিট হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত। ২০১৩ সালে একা আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে ২০১৫ সালে তার মেয়ের সঙ্গে যৌথ পাসপোর্টের আবেদন করেন তিনি। তবে সেটি প্রত্যাখ্যান করে দেয় হেনলি। একটি অভ্যন্তরীণ ইমেইল থেকে জানা যায়, প্রকাশিত সংবাদে প্রচ্ছায়ার সঙ্গে শাহীনের অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং ঘুষের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়বার নথিতে প্রচ্ছায়ার পরিবর্তে চট্টগ্রামে অবস্থিত দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেডের নাম উল্লেখ করেন তিনি। যেটি ১৯২৬ সালে তার বাবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই কোম্পানি নিয়ে সন্তষ্ট না হওয়ায় তাকে ও তার মেয়েকে ওই সময়ও আর পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় দ্বিতীয়বারও নাগরিকত্ব পাননি শাহীন।

মার্কিন গণমাধ্যমটি বলেছে, ২০১৫ সালের শেষের দিকে ফাঁস হওয়া নথিতে ‘আবেদন বাতিলের’ তালিকায় শাহীনের নাম উল্লেখ রয়েছে। মাল্টার সরকারি গেজেট নিশ্চিত করেছে যে, শাহীন অথবা বুশরা কেউই দেশটির নাগরিকত্ব পাননি। পড়াশোনার পর বৃটেনেই থেকে যান বুশরা। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে স্নাতক হওয়ার পরপরই, তিনি বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানে যোগ দেন। এরপর চাকরি ছেড়ে ২০১৮ সালের দিকে হঠাৎ করেই ‘লাইফস্টাইল, ফ্যাশন এবং ভ্রমণ’ বিষয়ক ইনফ্লুয়েন্সার বনে যান। গত বছর ইউটিউবে এক সাক্ষাৎকারে বুশরা বলেছিলেন যে, কিছুদিন ‘সংগ্রাম’ করার পর তিনি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাংকের চাকরির জন্য তার বাবা গর্বিত ছিলেন বলেও উল্লেখ করেছিলেন বুশরা। চাকরি ছাড়ার বছরেই উত্তর লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরোতে স্বামীর সঙ্গে পাঁচ বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাড়া দেননি বুশরা ও তার মা। তবে হেনলি নিশ্চিত করেছে যে, তাদের কেউই মাল্টার নাগরিকত্ব পাননি।

এদিকে চলতি সপ্তাহে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মন্তব্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

About admin

Check Also

বাংলাদেশের সীমান্তে গ্রেনেড নিক্ষেপের যে ব্যাখ্যা দিল বিএসএফ!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। তবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *