চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেড) অবস্থিত দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে শতাধিক শ্রমিক।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। যা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি যৌথ বাহিনীর পরামর্শে কারখানা দুটি ৩ দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, জেএমএস পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে গত বুধবার বিক্ষোভ করেছে। তাঁরা ইপিজেড এলাকার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি ফটক আটকে দেয়। জেএমএস কারখানার পাশে মেরিমকো লিমিটেড নামের আরেকটি কারখানা রয়েছে। ফটক বন্ধ করে দেওয়ার পর মেরিমকোর শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে বলে জেএমএসের শ্রমিকরা। এটি নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে শনিবার সকালে সাড়ে ১০টার দিকে দুই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।
দুই কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়। লন্ডভন্ড হয় কারখানার বিভিন্ন ফ্লোর। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আর আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নৌবাহিনীর কমান্ডার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণে এ মারমারি হয়। এতে ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আহতদের কারখানা থেকে বের করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। বেপজা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক করা হবে।’
চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স-০৩ এর মেজর আরেফীন কবির বলেন, ‘কোনো কারখানায় যাতে অসন্তোষ তৈরি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক আছি আমরা। সংঘাত নিরসনে দুটি কারখানা আগামী ৩ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় কারখানা দুটির শ্রমিকেরা একে–অন্যের ওপর দোষ চাপিয়েছে।
মেরিমকোতে কর্মরত আল আমিন হোসেন বলেন, ‘গত বুধবার বেতন–ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ফটক আটকে বিক্ষোভ করেন জেএমএসের শ্রমিকেরা। ওই একই ফটক দিয়ে তাঁদের বের হতে হয়। মেরিমকোর কিছু শ্রমিক ফটক খুলে বের হতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটি হয়। সেই রেশ ধরে আজ ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে মেরিমকোর শ্রমিকেরা এক হয়ে পাল্টা ধাওয়া দিয়েছেন।’
অন্যদিকে জেএমএসের শ্রমিকদের দাবি, মেরিমকো লিমিটেডের শ্রমিকেরা বিনা কারণে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে কারখানা।
এ ঘটনার বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. সুলাইমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুস সোবহান বলেন, ‘জেএমএস এবং মেরিকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে একটু মারামারি হয়েছে। মালিকরা তাদের বুঝিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’